গর্ভকালীন সময়ে কি কি করণীয়?

একজন গর্ভবতী মায়ের গর্ভকালীন সময়ে অনেকটা সতর্ক হয়ে চলা উচিত।এই সময় একজন মায়ের কিভাবে চলা উচিত  এই বিষয়ে আজকে আপনাদেকে টিপস দিব।


গর্ভকালীন সময়ে একজন মায়ের দরকার একটা রুটিনের মধ্যে চলাফেরা করা। এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত ও খাদ্যঘাটতি দূর করা দরকার।তাই এই সময় একজন গর্ভবতী মায়ের দরকার সুষম খাদ্য তালিকা।তাছাড়া ভারি কাজ থেকে বিরত থাকা, ভ্রমনে সতর্কতা, পরিধেয় বিষয়ে সতর্কতা, ঘুমানোর সঠিক নিয়ম, শরীরের সঠিক যত্ন নেওয়া, রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যাবস্থা নেওয়া এবং বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা। তাই চলুন প্রত্যেকটা বিষয়ে সঠিক ধারণা নেওয়া যাক-

খাদ্য

 শুরুতেই বলেছিলাম পুষ্টি নিশ্চিত ও খাদ্যঘাটতি দূর করতে একজন গর্ভবতী মায়ের দরকার সুষম খাদ্য তালিকা। এ সময়ে পর্যাপ্ত পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিম, মাছ, মাংস ও দুধ  খাওয়া দরকার। তাছাড়া প্রচুর পরিমাণে মওসুমি ফল ও শাক সবজি খেতে হবে।গর্ভকালীন সময়ে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ  পানি পান করতে হবে।বাজার থেকে ফলমূল, শাকসবজি কিনে আানার পর ২০-৩০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে  এতে করে ফরমালিন ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হবে। আর চেষ্টা করবেন অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার পরিহার করতে।

ভারী কাজ না করা

গর্ভকালীন সময়ে আপনাকে ভারী কাজ থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। এই সময় আপনার দরকার অতিরিক্ত পরিশ্রম না করা এবং হালকা হাটা চলা করা।পিচ্ছিল স্থানে হাটা যাবে না , ওয়াসরুমে গেলে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে,সিড়িঁ বেয়ে উপরে উঠতে গেলেও সতর্কতার সাথে উঠতে হবে এবং কারো সাথে কোনো প্রকার জুরাজুরি করা থেকেও বিরত থাকতে হবে।

ভ্রমনে সতর্কতা

আপনাকে গর্ভকালীন শুরুর সময় থেকে একদম শেষ তিন মাস পর্যন্ত  কোনো প্রকার ভ্রমনে না যাওয়াই উত্তম। খারাপ রাস্তায় কোনো যানবাহনে চলাচল করলে আপনার স্বাস্থের পক্ষে অনেক ক্ষতি হতে পারে। যদি বাহিরে বের হওয়ার এতই দরকার হয় তাহলে চেষ্টা করবেন আপনার ক্ষতি হবে না এমন যানবাহন এবং ভালো রাস্তায় চলাচল করতে।তবে সকালে বা বিকেলের দিকে কিছু সময়ের জন্য ভালো স্বাস্থ্যকর ও মনোরম পরিবেশে ভ্রমন করতে পারেন এতে করে আপনার শরীর সুস্থ  ও মন প্রফুল্ল থাকবে। তাই সবসময় চেষ্টা করবেন আপনার বাড়ির আশে-পাশে ফুলের বাগান, পার্ক বা লেকের পাড় ভ্রমণ করতে পারেন।

পরিধেয় বিষয়

গর্ভবতী মায়ের অবশ্যই গর্ভকালীন সময়ে পোষাকের দিকে নজর দিতে হবে। এই সময় গর্ভবতী মায়েরা পরিষ্কার পরিচ্ছিন্ন, আরামদায়ক, ঢিলেঢালা পোশাক এবং সহজে পরিধানযোগ্য সেরকম পোষাক পরিধান করা উচিত। গর্ভকালীন সময়ে মেক্সি পরিধান করলে সবচেয়ে ভালো হয়। তাই চেষ্টা করবেন এই সময় টাইট কোনো পোষাক পরিধান না করে ঢিলেঢালা পোষাক পরিধান করার।হয়। তাই চেষ্টা করবেন এই সময় টাইট কোনো পোষাক পরিধান না করে ঢিলেঢালা পোষাক পরিধান করার।

সঠিকভাবে ঘুমানো

গর্ভবতী মায়েদের ঘুমানোর সময় বা বিশ্রামের সময় বাঁ কাত হয়ে শোয়ার চেষ্টা করবেন। গর্ভকালীন সময়ে চেষ্টা করবেন রাতে কমপক্ষে আট ঘন্টার বেশি ঘুমানোর এবং দিনের বেলা কমপক্ষে দু-ঘন্টা বা তার বেশি ঘুম বা বিশ্রাম নেওয়ার।প্রতিদিন চেষ্টা করবেন ঘুমটা যেন একটা নির্দিষ্ট সময়ে নিয়ম মাফিক হয়। উল্টাপাল্টা  সময় ঘুমানো এবং অতিরিক্ত ঘুমানো থেকে বিরত থাকবেন।


শরীরের সঠিক যত্ন নেওয়া

আগেই বলেছিলাম একজন গর্ভবতী মায়ের সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। এসময় গর্ভবতী মায়েদের দাঁতগুলো অনেক নরম হয়ে যায়।তাই দাঁত এবং মাড়ির বিশেষ যত্ন নিতে হবে।সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই দাঁত মাজতে হবে।প্রতিদিন নিয়মিত সাবান দিয়ে ভালোভাবে সাবান দিয়ে গোসল করতে হবে। হাত পায়ের নখ কেটে ছোট রাখতে হবে।পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোষাক পরিধান করতে হবে।


রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যাবস্থা নেওয়া

গর্ভবতী মায়েদের চার{৪) থেকে আট(৮)মাসের মধ্যে অবশ্যই টিটেনাসের টিকা দিতে হবে। গর্ভকালীন সময়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটা কম থাকে তাই প্রিজারভেটিভ মুক্ত স্বাস্থ্যকর  খাবার খেতে হবে।আর এই সময় যেহেতু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা কম থাকে তাই হাম, চিকেন পক্স, ইনফ্লুয়েঞ্জা,ইত্যাদী ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত আছে এমন রোগী থেকে দূরে থাকতে হবে।


বিশেষ সাবধানতা

গর্ভকালীন সময়ে অনেক সাবধানতা অনলম্বন করতে হবে। এই সময়টা একজন একজন নারীর জীবনে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভকালীন সময়ের প্রথম তিন মাস থেকে শেষ তিন মাস স্বামীর সাথে সহবাস থেকে বিরত থাকবেন। পানি শূন্যতা রোধ করতে একটু বেশি বেশি পানি পান করবেন।অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, আবেগ, মানসিক চাপ, ভয়,রোগ-শোক ইত্যাদী গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থের জন্য অনেক ক্ষতিকর। তাই এই বিষয়গুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে। আর আগের থেকে দ্বিগুন খেতে হবে এই কথাটা ভুল, এতে আপনার কিন্তু সমস্যা হবে।গর্ভের প্রথম তিন মাস আগের মতোই খাবেন তবে তিন মাস পর থেকে ২৫০-৩০০ ক্যালোরী বেশি খেতে হবে।কলা আর দুধ একটা বাটিতে নিয়ে খেলেই এইটুকু পুষিয়ে যাবে।অবশ্যই এই সময় ঔষধ খেতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন। পছন্দের খাবার খাবেন সেটা না দেখে আপনাকে দেখতে হবে পুষ্টিকর খাবার কি না? শুধু একজায়গায় শুয়ে বসে কাটাবেন না, শরীরকে সচল রাখতে হালকা ব্যায়াম ও একটু হাটাচলা করবেন। আপনার যে কোনো সমস্যা হোক অবশ্যাই চিকৎসকের পরামর্শে ঔষধ খাবেন।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post